Sunday, March 7, 2010

ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের সুবর্ণ জয়ন্তী


লিখেছেন: রায়হান আহমদ (এসএসসি, ১৯৮১)

ঢাকার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ এ বছর শুরু করেছে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন। ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় মীরপুর রোড সংলগ্ন পঞ্চাশ একর জমির উপর গড়ে উঠা এই আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ১৯৬০ সালে যাত্রা শুরু করে। সুবর্ণ জয়ন্তীর এই লগ্নে একজন গর্বিত প্রাক্তন ছাত্র (রেমিয়্যানস) হিসেবে নিজের অজান্তেই বেশ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। এই পটভূমিতে উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত রেমিয়ানসরা যখন এ বছর এখানে একটি মিলনমেলার আয়োজন নিয়ে জল্পনা কল্পনা শুরু করেছেন তখন স্বভাবতই নিজের অজান্তে মন ফিরে যায় ফেলে আসা রঙিন দিনগুলোর মাঝে।



আশির দশকের মধ্যভাগ থেকে যখন আমি মডেল স্কুলে অধ্যয়ন শুরু করি তখন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন কর্নেল জিয়াউদ্দীন। তার সময়ে কঠোর নিয়মানুবর্তিতা আরোপ করে স্কুলে অনেক গুণগত পরিবর্তন আনার প্রয়াস লক্ষণীয় ছিল। শুভ্র সাদা ইউনিফর্মে সাপ্তাহিক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা শেষ করে পরের দিন কুচকাওয়াজের পর ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত টান টান উত্তেজনা থাকত আমাদের সবার মাঝে। কোন ক্লাশ আর ছাত্রাবাস শ্রেষ্ঠ হবে তা নিয়ে ছিল উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া তীব্র প্রতিযোগিতা ও ঈর্ষা। কঠোর নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে নিয়মের শৃংখল ভাঙ্গারও একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা হতো। প্রিন্সিপাল স্যারের বাসার গাছ থেকে আম চুরি করার মধ্যে আমাদের অনেকে তীব্র দুরন্তপনার এক্সাইটমেন্ট খুঁজে পেত। এসময় দেশের অন্যান্য মডেল স্কুলগুলো ক্যাডেট কলেজে রুপান্তরিত হলেও শেষ পর্যন্ত আমাদের কলেজ রক্ষা পেল।

এখানকার সবুজ প্রান্তর শহরের ব্যস্ত ও জনাকীর্ণতার বাইরে এক খন্ড মুক্তাঙ্গন। এখানকার স্কুলের শিক্ষার বিশেষত্ব ছিল শুধু লেখাপড়া নয়, বরং একজন অল-রাউন্ডার মডেল ছাত্র তৈরী করার একটি পরিশীলিত অনুশীলনে সবাইকে অভ্যস্ত করা। নিজের হাতে বাথরুম পরিস্কার করা শুরু থেকে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলকে সমৃদ্ধ করার মতো সব ধরণের এক্সট্রা কারিকুলার কার্যক্রমে সব ছাত্রকে নিয়মিতভাবে ও বাধ্যতামূলকভাবে যোগ দিতে হতো। এই অনুশীলন পরবর্তী জীবনে যে বিশেষভাবে কাজে লেগেছে তা বলাই বাহুল্য। শিক্ষকদের নি:শর্ত ভালবাসা ও মমত্বের পাশাপাশি সকল নিয়ম ভাঙ্গার নিত্য নতুন কৌশল আবিস্কার করার একটা অলিখিত বেড়াল-ইঁদুর খেলা চলতো। রাতে হোস্টেল থেকে দেওয়াল টপকে বেরিয়ে পড়ে যারা শ্যামলী হলে গিয়ে সিনেমা দেখে এসে পরের দিন ক্লাশে বর্ণনা দিতে পারত তারা স্বভাবতই অলিখিতভাবে হিরোর মর্যাদা পেত।

অনেক শিক্ষকদের মধ্য থেকে অধ্যক্ষ লুতফুল হায়দার চৌধুরীর বাংলা ক্লাশের কথা খুব মনে পড়ে। তার ভাই শহীদ অধ্যাপক মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর কথা প্রায় আলাপে উঠে আসতো। ইন্টারমিডিয়েট ক্লাশে প্রিন্সিপ্যাল স্যারের বাংলা ক্লাশের জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। প্রয়াত ওমর আলী স্যার যখন ইতিহাস পড়াতেন তখন তার অপূর্ব শব্দমালায় জীবন্ত হয়ে উঠত ইতিহাসের নায়করা। সবসময়ই স্যার বলতেন, "ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো শিক্ষা যে ইতিহাস থেকে মানুষ শিক্ষা নেয় না"। ইংরেজী পড়াতেন আনওয়ার রহমান স্যার। খুব সহজে তাকে ক্ষেপানো যেত বলে বেচারী শিক্ষক যথেস্ট ভোগান্তির শিকার হতেন। আরও অনেক শিক্ষক স্যারের কথা খুব মনে পড়ছে, কিন্তু তা অন্য কোন সময়ের জন্য তুলে রাখা হলো।


এই ডিসি মেট্রোতে আসার অনেক বছর আগে প্রাক্তন ছাত্র সোহেল সামাদের আবৃত্তি আমাকে মুগ্ধ করে রেখেছিল। ভয়েস অফ আমেরিকাতে কর্মরত অবস্থায় খুব অকালে তিনি চলে যান। আমেরিকায় নিযুক্ত প্রাক্তন রাস্ট্রদূত শমসের মোবিন চৌধুরী ছিলেন আমাদের কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। বর্তমান পররাস্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসও এই স্কুলের ছাত্র। এখানে এসে ম্যারিল্যান্ড নিবাসী স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষয়িত্রী বাংলা ক্লাশের ডি আর বানু ম্যাডামকে পেয়ে খুব ভাল লাগে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সমস্ত ছক নির্মাণ ও অনুশীলনে তিনি ছিলেন পুরোধা। আমাদের বেশ কয়েক ব্যাচ সিনিয়র আদেল আহমদকে ডিসি'র সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে সক্রিয় দেখতে পেয়ে খুব ভাল লাগে। এছাড়া, আমাদের মাঝে বিভিন্ন সময়ের ও প্রজন্মের ছাত্ররা এখানে ছড়িয়ে আছে। তাদের সবাইকে একত্রিত করে একটি পূনর্মিলনীর আয়োজন নিয়ে ভাবনা আবারও আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে স্কুল ও কলেজের সেই সোনালী দিনগুলোতে।

সুবর্ণ জয়ন্তীকে সামনে রেখে উত্তর আমেরিকায় একটি পূনর্মিলনীর পরিকল্পনায় যারা যোগ দিতে চান তাদেরকে সাইয়েদ মোখতার আহমেদ (ই-মেইল: syahmad15025@yahoo.com ) অথবা রায়হান আহমদ (ই-মেইল:raihan47@gmail.com )এর সাথে যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো যাচ্ছে। সূত্র: নিউজ বাংলা, ফেব্রুয়ারী ১৫, ২০১০

1 comment:

  1. Excellent article...very interesting to read...loved it.

    ~ Mahmood (SSC 1977)

    ReplyDelete